Notification texts go here Contact Us Buy Now!

সাড়ে ছয়'শ বছরের পুরনো আদিনা মসজিদে মূর্তি কেন? এটা কি পূর্বে মন্দির ছিল?

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated


 সাড়ে ছয়'শ বছরের পুরনো আদিনা মসজিদে মূর্তি কেন? এটা কি পূর্বে মন্দির ছিল?

-------------

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমজুড়ে আদিনা মসজিদকে ঘিরে একটা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হিন্দু ধর্মীয় সাধু হিরন্ময় গোস্বামী আদিনা মসজিদে ঢুকে সেখানে থাকা গণেশ মূর্তিতে সেজদা দিচ্ছে। 

পুলিশ তাতে বাধা দিলে সাধু হিরন্ময় গোস্বামীর সাথে তুমুল বাক-বিতন্ডা চলে। ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগের আইন অনুযায়ী পুরাতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত সাইটে ধর্মীয় কার্যাবলী নিষিদ্ধ। আইনভঙ্গ করে এই হিস্ট্রিকাল সাইটে পূজো করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা প্রদান করে।

সুলতান সিকান্দার শাহ'র ৩৪ বছরের বাংলা শাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো রাজধানী পান্ডুয়ায় উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় মসজিদ আদিনা'র পত্তন। আদিনা মসজিদের নির্মাণ শেষ হয় ১৩৭৪ সালে। প্রায় ১০ বছর ধরে নির্মাণ করা হয় মসজিদটি৷ দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে আসা মূল্যবান কালো পাথরের সুনিপুণ সংযোজন দেখা যায় মসজিদটিতে। মহিলাদের নামাজের ব্যবস্থাও ছিল। সেসময় প্রায় ১০ হাজার মুসলিম একত্রে নামাজ পড়তে পারতো। মসজিদটি সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদের অনুকরণে তৈরি।  একটি আদর্শ ও রাজকীয় মসজিদের যতগুলো গুণ থাকার দরকার তার সবই রয়েছে মসজিদটিতে।

কিন্তু 

আদিনা মসজিদের প্রাচীরে,  দরজার উপরে, মিহরাবের উপরে হিন্দু দেবতাদের মূর্তি উৎকীর্ণ করা। মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে প্রকান্ড এক শিবলিঙ্গ। এছাড়া আরও অনেক হিন্দুয়ানী চিহ্নাদি রয়েছে। এসব পর্যবেক্ষণ করে হিন্দু সাধুদের অভিমত হলো এটি পূর্বে মন্দির ছিল যা ধ্বংস করে বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহ এখানে মসজিদ তৈরি করেছে। তারা এটিকে আদিনাথ মন্দির আখ্যা দেয়।  

তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো ঐতিহাসিক দলিল নেই। শুধু দেয়ালে উৎকীর্ণ মূর্তিগুলোর উপর ভিত্তি করে তারা এটিকে মন্দির দাবি করছে।

 দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা মসজিদ  জঙ্গলে ঢাকা ছিল। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রথম মহা পরিচালক আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম জঙ্গল কেটে মসজিদটি উদ্ধার করেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে থাকা সিকান্দার শাহ'র সমাধিও ভুলক্রমে উপড়ে ফেলা হয়।তিনি কখনই তার লেখনীতে এটিকে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে উল্লেখ করেন নি। বরং তিনি এটি বাঙালিদের অনন্যকীর্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।  


কথা হলো মসজিদের দেয়ালে মূর্তি কেন?

-মন্দির এবং মসজিদ একটি অপরটির সম্পূর্ণ বিপরীত।  মন্দিরে মূর্তি পুজো হয় কিন্তু মসজিদে মূর্তির কোনো স্থান নেই। কিছু আরবি ক্যালিগ্রাফি থাকতে পারে। ইসলামে মূর্তি নিষিদ্ধ জেনেও সুলতান সিকান্দার শাহ কেন গণেশ মূর্তি মসজিদের দেয়ালে স্থান দেবেন? আর তাতে মুসলিমরা নামাজ পড়বে? 

তিনি মসজিদে এত দামি পাথর ব্যবহার করেছে যা অনেক দূর থেকে আনা হয়েছে।  হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত মূর্তি উৎকীর্ণ করা পাথর তার ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন ছিল? কখনই না। 

একটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সুলতান সিকান্দার শাহ পরবর্তী কেউ এই ন্যাক্কারজনক কাজটি করেছে।  

কে করতে পারে?

-

ইলিয়াস শাহী রাজদরবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ  আমলা ছিলেন রাজা গণেশ। প্রথমদিকে তিনি দিনাজপুরের ভাতুড়িয়া অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। দক্ষ কূটনীতজ্ঞ ও কর্ম দক্ষতার কারণে ইলিয়াস শাহী রাজবংশে গুরুত্বপূর্ণ আমত্যে পরিণত হয়।  তিনি মুসলিমদের রাজদরবারে চাকুরি করলেও প্রচন্ড মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন।  সুলতান সিকান্দার শাহ'র মৃত্যুর পর তার বংশধরকে হত্যা করে রাজত্ব কেড়ে নেয় রাজা গণেশ। রাজত্ব পেয়েই মসজিদ ও ইসলামী কীর্তিগুলোর ধ্বংস সাধন শুরু করে।  একইসাথে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর গনহত্যা চালায়, অসংখ্য দরবেশ-সুফিদের হত্যা করেন। যারা মধ্যযুগের ইতিহাস পড়েছেন তারা সবাই একমত হবেন - রাজা গণেশ অত্যন্ত হিংস্র ছিলেন। 

রাজা গণেশ এই ধ্বংসযজ্ঞের ধারাবাহিকতায় আদিনা মসজিদ দখল করে নেন। এরপর মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ করে তা কাছারিঘর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন। সেসময় তিনি এটিতে হিন্দুয়ানী চিহ্নাদি যুক্ত করেন। দরজার উপর, মিহরাবের উপর এবং প্রাচীরে হিন্দু মূর্তির পাথরখন্ড বসিয়ে দেন।  এখনও ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেগুলো মসজিদ নির্মাণ পরবর্তীতে যুক্ত করা হয়েছে। মূল পাথরখন্ডের সাথে অমিল গাঁথুনি। 

শ্রী সুখময় মুখোপাধ্যায় গণেশ সম্পর্কে লিখেছেনঃ

‘সিংহাসনে বসার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশদের সাথে তাঁর বিরোধ বেঁধে ওঠে। গণেশ তখন বহু দরবেশকে হত্যা করেন।

পান্ডুয়ার অন্যান্য দরবেশ এবং উলেমাকে তার আদেশে জলে ডুবিয়ে বধ করা হয়’।

সঙ্গীত শিরোমণিতে রাজা গণেশকে আগুনের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে: ‘এই আগুনে মুসলমানেরা পতঙ্গের মত পুড়ে মরেছিল’।

শ্রী গণেশ রাজার অত্যাচার সম্বন্ধে পান্ডুয়া অঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। প্রবাদটি এই যে, ‘রাজা গণেশ ক্ষমতা লাভের পরে আদিনা মসজিদকে তার কাছারী বাড়ীতে পরিণত করেছিলেন।…. এই প্রবাদ সত্য হওয়া অসম্ভব নয়’। এই সময়ই অনিন্দ্য সুন্দর মসজিদকে পুরোপুরি ধ্বংস সাধন না করে এটিকে কাছারিঘর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন। এবং হিন্দুত্ববাদী নিদর্শন গুলো প্রতিষ্ঠা করেন।

এ সম্পর্কে এইচ এস স্টেপলটন লিখেছিলেন,

It may also be added with reference to the supposed connection of Raja Kans with Eklakhi building that local tradition states that when the Raja objained supreme power over Bengal after the death of the short lived successors of Ghiasuddin, out of contempt of Muhammadanism he used the adjacent adina mosque as his Kacheri (Magistrate’s Court or Zomindari Office).

মুসলিম আলেম হত্যা ও ইসলামী কীর্তিনাশের কারণে জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শর্কীর সাথে রাজা গনেশের যুদ্ধও হয়। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গণেশ নিজ পুত্র যদুকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার মাধ্যমে মুসলিমদের কৃপা লাভ করে। ইব্রাহিম শর্কী ফিরে গেলে গণেশ আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে মুসলিম নিধন শুরু করে। এভাবে সাত বছর রাজত্ব করার পর নিজ পুত্র যদু (পরে মুসলিম হয়ে জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ) গণেশকে হত্যা করে আবার মুসলিম শাসনের সূচনা করেন।  এরপর আদিনা মসজিদকে নামাজ উপযোগী করে তুলা হয়েছিল কিনা এ সম্পর্কে জানা যায় না।  তবে ধারণা করা যায়, জালালুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ'র রাজত্বের সময় স্থানীয় মুসলিমরা উৎকীর্ণ মূর্তিগুলো বিকৃত করে কিছুকাল নামাজ পড়েছেন।সুলতানী আমলের পতনের পর মসজিদের জৌলুস হারিয়ে যেতে থাকে। বাংলায় মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে রাজধানী পান্ডুয়া থেকে কখনো ঢাকা, কখনো সোনারগাঁও বা কখনো মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হয়। এরপর পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদে ধীরে ধীরে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

অতএব, আদিনাথ মন্দির ভেঙ্গে আদিনা মসজিদ তৈরির সুস্পষ্ট দলিল পাওয়া যায় না।  শুধু তা-ই নয় বাংলার কোনো মুসলিম সুলতানই মন্দির ভাঙ্গার মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে এমন প্রমাণ মেলে না।  উলটো বাংলায় রাজা গণেশ কর্তৃক আদিনা মসজিদ, অসংখ্য খানকা ও অন্যান্য মুসলিম স্থাপত্য ধ্বংসের প্রমাণ মেলে।

About the Author

Hey there! My name is Abdur Rahman, I am a Professional Web Designer, Graphic Designer. I am Content Creator from Sylhet , Bangladesh. I love coding and editing, so I always try to create something new and interesting.

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.